৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সরকারের মূল লক্ষ্য হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা: প্রেস সচিব


| PNN

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে বিচার করা অন্তর্বর্তী সরকারে মূল লক্ষ্যগুলোর অন্যতম বলে নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান প্রেস সচিব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

আওয়ামী লীগ আমলের আইসিটি ও ডিজিটালাইজেশন খাতের দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র করতে উচ্চপর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দুই-একদিনের মধ্যে গঠিত এ কমিটি ২ মাসের মধ্যে শ্বেতপত্র দেবে বলেও জানান তিনি।

পতিত শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে শফিকুল আলম বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য তাকে বাংলাদেশে এনে বিচার করা। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যে রিপোর্ট হয়েছে, তাতে স্পষ্ট কি ধরনের অপরাধ উনি করেছেন। তাকে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। জাতিসংঘ ও কিছু-কিছু মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের পর অনেক চাপ তৈরি হয়েছে। এই চাপের একটা নমুনা দেখেছেন যে ইন্ডিয়া টুডে একটা জরিপ করেছে, সেখানে দেখা গেছে ৫৫ শতাংশ চায় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে। কিছু শতাংশ চাচ্ছে তাকে অন্য দেশে দিতে। মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ মানুষ চায় শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখতে। শেখ হাসিনাকে ফেরত এনে সশরীরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সরকারের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে জানান প্রেস সচিব।

আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, আমরা বারবার বলেছি, এই বিষয়ে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, আমাদের একটাই কথা আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতা কর্মী ও সমর্থক জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তার আগে গুম-খুনে জড়িত, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের সবার বিচার হবে। এটা হওয়ার পর দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে তারা কি ভাবছেন বা এটার ভবিষ্যৎ কি হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয় সংস্কারের প্রতিবেদন নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেদিন জানানো হয় প্রতিবেদন নিয়ে পরবর্তীতে আলাদা আলাদা ও জোটগতভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের রূপরেখা কমিশন দেবে বলে জানান প্রেস সচিব।

১১-১৩ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। সফরের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, দুবাই বাংলাদেশি শ্রমিক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে। এই নিয়ে ড. ইউনূস সেখানকার ৫-৬ জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আশা করছি, এই নিষেধাজ্ঞা দ্রুত উঠে যাবে। সেখানে আবারও বাংলাদেশি শ্রমিক যেতে পারবে। এই নিয়ে সরকারের কাজ চলমানও রয়েছে।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আইসিটি খাতের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে দেশি-বিদেশে আইসিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, গত কিছুদিন আইসিটি এবং ডিজিটালাইজেশনকে ঘিরে অনেকগুলো দুর্নীতি সংবাদ গণমাধ্যমে বেরিয়েছে। ড. ইউনূস চাচ্ছেন আইসিটি খাতের দুর্নীতি নিয়ে একটা শ্বেতপত্র হোক। এই শ্বেতপত্র তৈরির জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে বিশ্বের সুনাম ধন্য, যারা আইসিটি নিয়ে কাজ তাদের যুক্ত করা হবে। তাদের মূল কাজ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, সেটা কীভাবে করেছে, কত টাকা এখান থেকে প্রচার হয়েছে তা বের করা। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো খাতে কত টাকা প্রচার হয়েছে তার পুরো বিষয়টি দেখা। এতে আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দেখা। আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিটি একটি দুর্নীতির শ্বেতপত্র বের করবে বলেও জানান শফিকুল আলম।

বাংলাদেশে এখনো বহু সাংবাদিক হুমকি-হামলার শিকার হচ্ছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, সাংবাদিকতার যেকোনো প্রতিবেদনকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে নিয়ে অনেক ধরনের মন্তব্য করা হয়। আমরা সিপিজেকে বাংলাদেশে এসে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা দেখার আহ্বান করছি। আমরা মনে করি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম। আমরা কোনো পত্রিকাকে সংবাদ ওঠানোর জন্য হুমকি দিইনি। তিনি বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সাংবাদিকেরা হামলার শিকার হয়েছে, সেটা আমরা পুলিশকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছি, কিছু ক্ষেত্রে দেখেছি সাংবাদিকেরা অভিযোগ দিতে চান না। আমরা চাই সাংবাদিকেরা যেন নির্বিঘ্নে সাংবাদিকতা করে। তারা সব ধরনের সংবাদ পরিবেশন করবে, আমাদের সমালোচনাকেও আমরা সাধুবাদ জানাবো।