২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সবার জন্য খুলে গেল সুন্দরবনের দ্বার


Online Desk | PNN

১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

এক টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে ইকো-ট্যুরিস্ট (প্রতিবেশ পর্যটক) ও বনজীবীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন।

একইসঙ্গে শুরু হচ্ছে সুন্দরবনের নয় মাসের পর্যটন মৌসুম। এর ফলে পর্যটক, মৎস্যজীবী ও বনজীবীরা অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছেন।

সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও পর্যটক ও অন্যান্যদের জন্য পানির বোতল ও চিপসের প্যাকেটের মতো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ।

বনের নদ-নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুমের কারণে তিন মাস (১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট) পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে সড়কপথে বাগেরহাট তথা সুন্দরবনের পূর্বাংশের দূরত্ব কমে এসেছে। মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বাগেরহাটে আসা যাচ্ছে। যার কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী পর্যটক বেশি হবে।

সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য হাতছানি দেয় দেশি-বিদেশি নানা রঙের মানুষকে। বিশ্বের অন্যতম সমুদ্রতীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বৈচিত্র্যময় প্রাণিকুল নিয়ে এ বন। সুন্দরবন বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রা হরিণের জন্য। তবে এখানে বানর, কুমির, হাঙর, ডলফিন, অজগর ও বনমোরগ ছাড়াও রয়েছে ৩৩০ প্রজাতির গাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ৩২ প্রজাতির চিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ। এসব বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশবিদেশের পর্যটকরা আসেন। জালের মতো অসংখ্য নদী আর খাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সুন্দরবন জুড়ে।

এদিকে শুক্রবার পর্যটন মৌসুমের প্রথম দিন খুলনা ও মোংলা থেকে বেশ কিছু পর্যটকবাহী নৌযান বা প্রমোদতরি সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের ট্যুর অপারেটররা তাদের লঞ্চসহ বোটগুলোকে রংতুলির আঁচর দিয়ে ও প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে নতুন করে সাজিয়েছেন।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আবু নাসের মোহসিন হেসেন বলেন, টানা তিন মাস বন্ধের পর পর্যটক, বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। আজ শুক্রবার থেকে জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোট চালকরা পাশ পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে যাত্রা শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, এবার কঠোরভাবে সুন্দরবনে পরিবেশ দূষণকারী সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বনের অভ্যন্তরে পানি ও স্থলভাগে যাতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল দ্রব্য ফেলতে না পারে সেজন্য সুন্দরবনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ প্লাস্টিকের এসব সামগ্রী বনের মধ্যে নিয়ে যায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। করা হবে জরিমানা।

সুন্দরবনে ঘুরে দেখার মতো স্পটগুলো

বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবন জুড়েই পর্যটকদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অপার সুযোগ রয়েছে। তবে সুন্দরবনে ঘুরে দেখার মতো স্পটগুলো হলো শরণখোলার টাইগার পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত কটকা, কচিখালীর অভয়ারণ্য কেন্দ্র, করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজননকেন্দ্র, কলাগাছিয়ায় ইকোট্যুরিজম সেন্টার, হিরণপয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, দুবলারচর, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে।

থাকতে পারেন ইকো কটেজে

খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ঢাংমারি গ্রামের সুন্দরী ইকো রিসোর্ট, বাগেরহাটের মোংলার দক্ষিণ চিলায় বাদাবন ইকো কটেজ, কয়রার বানিয়াখালীতে নিশিকুরি রিসোর্ট, ইরাবতী ইকো রিসোর্টসহ সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু কমিউনিটি ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে। কর্পোরেট, কাস্টমাইজড, ফ্যামিলি, স্টুডেন্ট, বাইকার সব ধরনের ট্যুরিস্টরা এখানে আসতে পারেন।

সুন্দরবনের কোলে সম্পূর্ণ ইকো সিস্টেমে তৈরি কটেজ থেকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়া, ভয় ভয় অনুভূতি নিয়ে বনের ছোট খালে নৌকা ট্রিপ, ফিরে এসে কটেজের ফলগাছ থেকে বিভিন্ন জাতের দেশীয় ফল, পুকুরে অবাধ সাঁতার, বড়শি-জাল দিয়ে পুকুর অথবা ঘেরে মাছ ধরা, গ্রাম্য হাট, জেলে পল্লী ঘুরে সন্ধ্যায় কটেজের বিচ চেয়ারে বসে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায় বাদাবন ইকো কটেজে থেকে। রাতে খোলা আকাশের নিচে তাবুতে থেকে চাঁদ-তারার লুকোচুরির সঙ্গে বার-বি-কিউ পার্টি বেশ জমে যায়।

যেভাবে যাবেন সুন্দরবন

একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাইলে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসিননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এসব বাসে পদ্মা সেতু পাড় হয়ে আগের তুলনায় খুব কম সময় খুলনায় যেতে পারেন। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও যেতে পারেন। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলায় অনেক বিলাসবহুল বাসে যেতে পারেন।