যাত্রীর শরীরে গন্ধ, এ অভিযোগে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো
তথ্যসূত্র: বিবিসি | PNN
৩০ মে, ২০২৪, ১:০৪ অপরাহ্ণ
শরীরে গন্ধ থাকার মিথ্যা অভিযোগে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে দেওয়া যাত্রীদের সবাই কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন যাত্রী আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।
শরীরে গন্ধ আছে এমন অভিযোগ এনে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ৫ জানুয়ারির ফিনিক্স, অ্যারিজোনা থেকে নিউইয়র্কগামী ফ্লাইট থেকে আটজন ব্যক্তিকে অল্প সময়ের জন্য নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন দাবি করেছেন, তারা প্রত্যকেই কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন বলেই তাদের সাথে এমনটি করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) ভুক্তভোগীদের মধ্যে অ্যালভিন জ্যাকসন, ইমানুয়েল জিন জোসেফ এবং জেভিয়ার ভেল নামের তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তারা বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তারা কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার জন্যই আমেরিকান এয়ারলাইন্স এমনটি করেছে এবং এর জন্য তারা বিব্রত ও অপমানিত হয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন, গায়ে দুর্গন্ধের কথা বলে ফ্লাইট থেকে যাদেরকে নামানো হয়েছে তারা সবাই কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই আলাদা সিটে বসেছিলেন এবং তাদের একজনের সাথে আরেকজনের আগে থেকেই কোন পরিচয় ছিল না।
অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে আমেরিকান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ঐ তিন ব্যক্তির হয়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ এনে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ‘পাবলিক সিটিজেন’ নামে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ।
বাম থেকে: অ্যালভিন জ্যাকসন, ইমানুয়েল জিন জোসেফ এবং জেভিয়ার ভেল। ছবি: সিবিএস
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীরা ফ্লাইটে বসে ছিলেন এবং ফিনিক্স ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট তাদের প্রত্যেকের কাছে গিয়ে তাদের বাইরে যেতে বলেন।
মামলার অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেয়েছিলেন যে ফ্লাইটে থাকা মোট ৮ জন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল কারণ “একজন সাদা পুরুষ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট একজন অজ্ঞাত যাত্রীর শরীরের গন্ধ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল।”
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের কর্মীরা তাদেরকে অন্য একটি ফ্লাইটে পাঠানোর চেষ্টা করলেও অন্য কোন ফ্লাইট না থাকায় তাদের আগের ফ্লাইটেই পুনরায় আসন গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
আমেরিকান এয়ারলাইনস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা বৈষম্যের সব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিই এবং আমাদের গ্রাহকরা ফ্লাইটের সময় যাতে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিতে পারেন সে চেষ্টা করি।”
মামলার অভিযোগপত্রে যোগ করা হয়েছে, ভুক্তভোগীরা যখন ফ্লাইট থেকে নেমে অপেক্ষা করছিলেন তখন পাইলট যাত্রীদের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘শরীরের গন্ধ’ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ফ্লাইট বিলম্ব হয়েছে। বাদীরা বলছেন, দুর্গন্ধের অভিযোগ মিথ্যা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীরা যে মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছেন তার জন্য এয়ারলাইনটিকে অনির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা উচিত।
ইমানুয়েল জিন জোসেফ তার অভিজ্ঞতার সাথে ১৯৯৫ সালে আলাবামার একটি বাসে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি রোজা পার্ক যে বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন তার তুলনা করেছেন।
তিনি মনে করেন, আমেরিকান এয়ারলাইন্স যাতে তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং ভবিষ্যতেও যাতে এমনটি আর না হয় তার জন্য তাদের মামলাটি বেশ গুরুত্ব বহন করে।
এর আগে ২০১৭ সালে এনএএসিপি নামে একটি নাগরিক অধিকার গ্রুপ আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ এনে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের এয়ারলাইনটির পরিষেবা ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিল। পরবর্তীতে এয়ারলাইনটি নিজেদের পরিষেবায় পরিবর্তন এনেছে জানানোর পর সে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল।