বেওয়ারিশ লাশ যেন আর না থাকে: প্রধান উপদেষ্টা
| PNN
৪ মার্চ, ২০২৫, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বেওয়ারিশ লাশ দাফনে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে একটা অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আহ্বান জানিয়েছেন,বেওয়ারিশ লাশ যেন আর না থাকে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুলের একটি ভবন উদ্বোধনে এসে এমন সমাজ বিনির্মাণের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যার যার মতো করে নিজেরাই বেওয়ারিশ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি, যাতে তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব কাছে থাকে। তাকে যেন সম্মানজনকভাবে দাফন করা যায়। এতে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কর্মকাণ্ডের কোনও ব্যাঘাত হবে না। বরং আমরা তাদের সম্মান দেখাবো, এই জিনিসগুলো চোখে তুলে ধরার জন্য। তারা না থাকলে জানতামও না এই লাশের কি হয়েছিল। ওরা থাকাতে আমরা জানলাম একটা সম্মানজনক ভাবে দাফন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা একটা প্রতীক হোক, আমাদের মনে উৎসাহ জাগাক যে সমস্ত দুর্বলতা সমাজের মধ্যে আছে সেগুলোর যেন আমরা প্রতিকার করতে পারি।
ড মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজকে আমার মস্ত বড় সৌভাগ্য এখানে উপস্থিত থাকা। ছোটবেলা থেকেই নাম শুনে আসছি। অদ্ভুত এক নাম, তার সঙ্গে একটা জিনিস জড়িত, এই নামের কোনও ব্যাখ্যা জানতাম না, শুধু জানি ‘বেওয়ারিশ লাশ’। বেওয়ারিশ শব্দটা শুনেছি লাশের সঙ্গে এবং আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কর্মকাণ্ড থেকে। এরা কারা কোন দিন জানি নাই, আজকে চাক্ষুস দেখলাম। এরা এমন এক জগত থেকে ভেসে আসে, একটা লাশ পড়ে থাকলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। স্বপ্নিল একটা জিনিস। যত দুর্গম হোক, যত কঠিন পরিস্থিতি হোক, ওই নামটি আসে, কে করেছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম এসে দাফন করে গেছে। এটা আমার কাছে খুব অবাক লাগতো। যার পরিচয় জানি না, কিন্তু প্রতিদিন খবর আসছে। এখন শুনলাম সারা দেশজুড়ে আছে। কখন কোথায় বেওয়ারিশ লাশ পড়ে থাকবে, ওই খানে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম অপেক্ষা করছে, এবং ঠিকই তারা সে সময় আসবে এবং তার সুন্দরভাবে ব্যবস্থা করবে। তাদের কোনও বক্তব্য কখনও কোনও পত্রিকায় দেখি নাই, করেন কিনা জানা নেই, কিন্তু আমার নজরে আসে নাই যে, এই কাজে কোনও বাহবা নিচ্ছেন। কিচ্ছু করে নাই, একেবারে চুপচাপ। অদৃশ্য কতগুলো মানুষ এসে সব করে দিয়ে যায়।
তিনি বলেন, বিশেষ করে করোনার সময় এই নাম বারেবারে এসেছে। কাজেই দেখছি যে, এরা চারদিকে ছড়িয়ে আছে। পরিচয় হবার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম বহু বড় বড় লোকজন এর সঙ্গে জড়িত জন্ম থেকে। ১৯০৫ সালে এর জন্ম, এটাও জানতাম না। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে, মুসলমান সমাজের সঙ্গে যাদের স্মৃতি আছে, তাদের সবাই এটার সঙ্গে জড়িত ছিল। এটা একটা বড় ঐতিহ্য বহন করে যাচ্ছে। আজকে বাচ্চাদের দেখেও ভালো লাগলো, এটা নতুন দিক, এ সম্পর্কেও জানা ছিল না। এরা লাশ দাফন করা ছাড়াও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কাজটা আর নামটা একাকার হয়ে গেছে এ দুটো থেকে আলাদা করা যায় না। কতগুলো নাম আছে, নামের অর্থটায় হল কাজ। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম নামের ব্যাখ্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় বলে মনে হয় না। নামটা শুনলেই সঙ্গে সঙ্গে মনে আসে কাজের কথা। এই নামটা সেই কাজের অর্থ-বাহক। নামটি একটি নতুন অর্থ ধারণ করেছে। বহু দিক থেকে এটি অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান আছে। কেউ ৬ মাস, কেউ ১০ বছর টিকে। এত দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রতিষ্ঠান টিকে আছে শুধু নয়, শক্ত আছে, মজবুত আছে, কার্যক্রম পরিচালনা করছে, নানাদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এতিমদের দিকে নজর দিচ্ছে। এটা অবাক কাণ্ড। এরকম আরও প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত উপমহাদেশে আছে কিনা আমার জানা নেই। কাজেই অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এত বছর ধরে সেবা চালিয়ে যাচ্ছে, কোনদিন এটা নিয়ে কোন খবর কাগজে প্রকাশিত হয় না। একমাত্র বলা হয় যে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম লাশ দাফন করেছে। এই দুটো শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত। আজকে আমরা গৌরববোধ করি যে, এরকম একটা প্রতিষ্ঠান যারা চালিয়েছে, সময় দিয়েছে, মেধা দিয়েছে, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আরো বহুদিকে এটার কর্মসূচি সম্প্রসারিত হোক।
নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে এতিম শিশুদের সঙ্গে ইফতার করেন প্রধান উপদেষ্টা। ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি গোলাম রহমান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি মুফলেহ আর ওসমানী।