বাজেটে ইলেক্ট্রিক গাড়িকে প্রাধান্য না দেওয়ার অভিযোগ
এমদাদুল হক | PNN
১২ জুন, ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ণ
বাজেটে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ অটোমোবাইল এসেম্বেলারস এন্ড ম্যানুফ্যাকচারারস এ্যাসোসিয়েশন – বিএএএমএ এবং বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক মোবিলিটি এ্যাসোসিয়েশন – বিইএমএ।
বুধবার (১২ জুন ২০২৪) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও বাজেট পরবর্তী এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন সংগঠন দুটির নেতারা।
বিশ্বব্যাপী চলমান ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাকেও বাঁধাগ্রস্থ করবে বলেও মন্তব্য করেছেন সংগঠন দুটির নেতারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী গত ০৬ জুন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। বর্তমান অর্থনীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতি গতি পুনরূদ্ধারে যা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
বক্তারা আরও বলেন, এবারের বাজেট প্রতিপাদ্য বিষয় ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে অন্যতম উপাদান হল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা। স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশা ছিল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে যা প্রতিফলিত হয় নি। যা এই শিল্পের প্রসারকে এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্ল্যান ২০৩০ এ গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে চলমান ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাকেও বাঁধাগ্রস্থ করবে।
আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়নে বৎসরভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহন করে বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আগামী দুই বছর সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির উপর সম্পূরক শুল্ক মওকুফ করন সহ সর্বনিম্ন কাষ্টমস ডিউটি নির্ধারণ এবং পরবর্তী ১০ বছর ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ন্যায় ইলেকট্রিক গাড়ির প্রোগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং এর উপর ভিত্তি করে কর কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি এবং নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকেল রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফ সহ প্রতিবছর গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন প্রদানের ক্ষেত্রে এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফের প্রস্তাব করছি।
এছাড়া ইলেকট্রিক ভেহিকেলে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী ও চার্জিং স্টেশন স্থাপনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উপর সর্বনিম্ন হারে আমদানি শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। ইলেকট্রিক মোটর শিল্প বিকাশে এই শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে রেয়াতী সুবিধা প্রদান করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
বক্তারা বলেন, বায়ুদূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীর উন্নয়নশীল ও উন্নত রাষ্ট্রগুলি ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ব্যবহারের উপর অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ইলেকট্রিক ভেহিকেলের দ্রুত প্রসারে এই শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবহারকারীগনকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছে। যেমন: পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক ভেহিকেল আমদানির উপর বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আমদানি শুল্ক ১৫% নির্ধারণ, আয়কর আইনের ৮০ ইইবি ধারার আওতায় প্রথমবার ইলেকট্রিক ভেহিকেল ক্রয়ের জন্য গৃহীত ঋণের মোট ১.৫ লক্ষ রুপি পর্যন্ত কর সুবিধা প্রদানসহ বিনামুল্যে ইন্সুরেন্স ও রেজিষ্ট্রেশন, সকল ইলেকট্রিক ভেহিকেলের উপর GST সুবিধা প্রদান, মূল্যের উপর ৪০% পর্যন্ত প্রণোদনা প্রদান করেছে। অনুরূপভাবে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ইলেকট্রিক ভেহিকেল প্রসারে কর ছাড় সহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করেছে। যেমন: রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স, পার্কিং ফি, টোল, আমদানি কর মওকুফ, নিম্ন হারে লোন সুবিধাসহ মূল্যের উপর নগদ সুবিধা প্রদান করেছে।
বক্তারা বলেন, ইলেকট্রিক ভেহিকেল একটি প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। এই শিল্প উন্নয়নে অতি দ্রুত কার্যকরী দিক নির্দেশনা প্রদান করা হলে আগামী দিনে বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থানের কারনে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। অটোমোবাইলের মত প্রযুক্তি নির্ভর ভারী শিল্প গড়ে তুলতে সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা ছাড়া শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়।