৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ফ্যাসিবাদ মুক্তির এক বছর


প্লাবন তারিক | PNN

৫ আগস্ট, ২০২৫, ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

আজ ফ্যাসিবাদ মুক্তির এক বছর পূর্তি। সময়টি ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমের পতন ও ছাত্র-জনতার বিজয়ের যুগসন্ধিক্ষণ। জুলাইয়ের এই বিপ্লবে শহীদ হয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার মানুষ, আহত হয়েছিলেন বিশ হাজারেরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ মুক্ত হয় সাড়ে পনেরো বছরের এক ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে।

 

‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ কৌশলে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্ট সরকার এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভিন্নমত দমন, গুম, খুন, নিপীড়ন ও দুর্নীতির ভয়ংকর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিল। দিল্লি নির্ভরতায় টিকে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতিটি স্তম্ভকে ধ্বংস করেছিল। সেই শাসনের পতন ঘটেছিল গত বছরের জুলাই বিপ্লবে, যা আজ ইতিহাস।

 

স্মরণ রাখা জরুরি, বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়নি। আজও প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যমসহ নানা সেক্টরে ফ্যাসিবাদের ছায়া সক্রিয়। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত এই অপশক্তি নিঃশব্দে তাদের পুরনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। গত এক বছরে নানা ক্ষেত্রে অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব ও বিভাজনের রূপ দেখা দিয়েছে। ফলে, বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন রয়েছে যোজন যোজন দূরে।

 

বছর ঘুরে আমাদের সামনে এসেছে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের ভাঙন, বিপ্লবীদের সম্পর্কের বৈরীতা,  নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ, বহুদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েন। সেইসাথে পতিত ফ্যাসিস্টদের চক্রান্তও আজ স্পষ্ট। মাঝে ক্রেডিট ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে ছাত্রনেতাদের অন্তঃকলহ জাতিকে একপ্রকার হতাশ করেছে।

 

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে—এখনো আমরা এক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই লড়াই শুধু পতিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের লড়াই। এই লড়াইয়ে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই।

 

ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের এক বছরপূর্তিতে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—বিপ্লবের বিভাজন নয়, ঐক্যই হোক শক্তি। জুলাইয়ের বিপ্লব ছিল ঐক্যেরই ফল। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল বলেই বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখন আবার প্রয়োজন সেই ঐক্যের নবতর বিকাশ।

 

খুব কাছ থেকে এই বিপ্লবকে দেখেছি আমি। একদিকে মাঠের ছাত্র-জনতার নির্ভীক আন্দোলন, অন্যদিকে আন্দোলনের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা—সব মিলিয়ে গত বছরের এই সময়টি যেন একট স্বপ্নের মতো কেটেছে। একদিকে ছিল ফ্যাসিবাদ পতনের চরম আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা। দিনশেষে, ৫ আগস্ট যখন বিপ্লবকে সফল হতে দেখলাম, তখন থেকে মনে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আজও সেই স্বপ্ন দেখি।

 

ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবের একজন অংশীদার হিসেবে আজও সেই নতুন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি—যেখানে শোষণ থাকবে না, থাকবে না দমনপীড়ন; থাকবে না গুম, খুন, আর ট্যাগ দিয়ে নিপীড়নের কালচার। নির্মূল হবে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি। দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজব্যবস্থা।

 

ইনকিলাব জিন্দাবাদ।