৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে: বাংলাদেশ–চীন যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি


| PNN

২৮ মার্চ, ২০২৫, ৮:৫৬ অপরাহ্ণ

বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে চীনে রয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং, ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েক্সিয়াং এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জেংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও বেশ কয়েকটি চুক্তি নিয়ে চীন ও বাংলাদেশ একটি যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দেশ ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে আরও গভীর করতে এবং রাজনৈতিক আস্থা ও উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয় বাড়াতে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশ একে অপরের মূল স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে। বাংলাদেশও ‘এক চীন’ নীতিতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

দুই দেশ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অধীনে উচ্চমানের সহযোগিতা প্রসারিত করতে, শিল্প ও সরবরাহ চেইনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে এবং উভয় দেশের আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রশংসিত হয়েছে।

অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মংলা বন্দর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে।

চীন–বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে দ্রুত আলোচনা শুরু এবং বিনিয়োগ চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর বিষয়েও দুই দেশ সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে চীনে আম, অন্যান্য কৃষি ও জলজ পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া দ্রুত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহযোগিতার সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে।

জলবিদ্যুতের সম্ভাব্যতা, বন্যা প্রতিরোধ, নদী খনন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি ভাগাভাগির মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়েও দুই দেশ একমত হয়েছে। তিস্তা নদী মহাপরিকল্পনা (ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার) প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং সামুদ্রিক অর্থনীতিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

২০২৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি এবং চীন–বাংলাদেশ জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান–প্রদানের বছর উদ্‌যাপনের বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। সংস্কৃতি, পর্যটন, গণমাধ্যম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং যুব আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্বমানবতার জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ গড়তে চীনের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছে এবং গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর: শির সঙ্গে বৈঠক, দুই দিনে আরও যা ঘটলপ্রধান উপদেষ্টার চীন সফর: শির সঙ্গে বৈঠক, দুই দিনে আরও যা ঘটল
রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সমর্থন জানিয়েছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরকালে দুই দেশের সরকার অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, ক্লাসিকের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, গণমাধ্যম এবং স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং এবং চীনা জনগণের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং চীনা নেতৃত্বকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।