দার্জিলিং-সিকিমে পর্যটনের নামে লুট, চরম হয়রানি!
Online Desk | PNN
২৯ মে, ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ
গ্যাংটকের মহাত্মা গান্ধি মার্গে রাতে লটবহর নিয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজন পর্যটক। প্রত্যেকের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। হোটেলে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে যুক্তি তাঁদের। অন্যদিকে, দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) চকবাজারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ক্লাবসাইড রোডে থাকা পর্যটন দপ্তরের একটি কার্যালয়ে আশ্রয় চেয়েছিলেন কয়েকজন পর্যটক। পর্যটন দপ্তরের কর্মীরা তাঁদের স্থানীয় একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সোমবার রাতের দুই পাহাড়ের এই ছবিতে একদিকে যেমন পর্যটকদের দুরবস্থা ফুটে উঠেছে তেমনই সামনে এসেছে প্রশাসনিক গাফিলতি। শুধু হোটেল নয়, গাড়িভাড়ার নামেও লুঠ চলছে, যা নিয়ে সরব হয়েছেন পর্যটকরা (Tourist)। তাঁদের অনেকেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন সমাজমাধ্যমে। এর প্রভাব যে ভবিষ্যতে পড়বে, সেই অশনিসংকেত দেখছেন পর্যটন (Hill Tourism) ব্যবসায়ীদের বড় অংশ।
১৫ দিনে ৭ লক্ষ! সিকিম পর্যটন (Sikkim Tourism) দপ্তরের তথ্য বলছে, গত সাতদিনে পাহাড়ি রাজ্যটিতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এসেছেন। হ্রদ বিপর্যয়ের পর এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি কেউ। কিন্তু সিকিমে বেড়াতে এসে পর্যটকদের যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতের লক্ষ্যপূরণ নিয়ে সংশয় দানা বাঁধছে। কলকাতা থেকে সিকিমে বেড়াতে এসেছিলেন সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘বাজেট হোটেলে দিনপ্রতি তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। গ্যাংটক থেকে মহাত্মা গান্ধি মার্গ যেতে জনপ্রতি গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে দুশো টাকা করে। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে গাড়ি রিজার্ভ করে গুনতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা।’ এখন কেউ যাতে সিকিমে না আসেন, সেই আবেদনও রাখছেন সপ্তর্ষি।
আগাম বুক করা না থাকলে অনেকেই হোটেল পাচ্ছেন না বা হোটেলের রুম নিতে পারছেন না ভাড়ার বহর শুনে। যেমন সোমবার রাতে কলকাতা থেকে গ্যাংটকে এসে হোটেল না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ে এমজি মার্গে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ছিল কলকাতার একটি পর্যটক দল। যদিও পরে পুলিশ ওই দলটিকে একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ওই দলটিও এখন সিকিমে বেড়াতে না যাওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু গ্যাংটকে হোটেল বা রুম তো কম নেই। তাহলে এমন পরিস্থিতি কেন? ৪ অক্টোবরের হ্রদ বিপর্যয়ের ক্ষত এখনও রয়েছে উত্তর সিকিমে। একাধিক জায়গার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপন্ন। ফলে গ্যাংটকে অতিরিক্ত চাপ পড়েছে বলে সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য। যদিও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি মুনাফার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শুধু হোটেল নয়, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়িভাড়াও। শিলিগুড়ির এসএনটি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা এবং এনজেপিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, এখন শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে ১০-১২ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এদিন এসএনটি বাস টার্মিনাসের সামনে এক দম্পতির কাছে ৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় একটি শেয়ার গাড়ি থেকে। শেষে ওই দম্পতি বাসে ওঠেন। দার্জিলিং যাওয়ার ক্ষেত্রেও গুনতে হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলছেন, ‘কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীদিনে পড়বে। পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পদক্ষেপের দাবি জানানো হবে।’ লুট বন্ধের দাবি তুলেছেন হিমালয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তীও।