১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা শহরে স্কুলে হেঁটে যাতায়াত নিরাপদ নয় : সিএলপিএ


সংবাদ বিজ্ঞপ্তি | PNN

২৫ মে, ২০২৩, ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা শহরে পথচারীদের নিরাপদে হেঁটে চালাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। যানজটপূর্ণ ঢাকা শহরে এলাকায় পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব পথচারীদের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরী করে। সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের ১৩ শতাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, দেশে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন, তাদের মধ্যে ৮০৩ জনই শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই হেঁটে যাতায়াত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারিত না থাকা, অপর্যাপ্ত গতিরোধক, জেব্রাক্রসিং এবং হেঁটে চলাচলের উপযোগী ফুটপাত না থাকাই এসব দূর্ঘটনার প্রধান কারন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপি এর উদ্যেগে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স অব এনজিও’স ফোর রোড সেইফটি এর সহযোগিতায় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বেঙ্গল মিডিয়াম হাই স্কুল এবং আজিজ খান রোডে অবস্থিত ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলে সড়কে পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের বিষয়ে একটি সচেতনতা মুলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সচেতনতামূলক কার্যক্রমে উভয় স্কুলের প্রায় ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

সচেতনতামুলক কার্যক্রমের সভাপতিত্ত্বের বক্তব্যে সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ এর প্রোগ্রাম এভিাইজার আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন পথচারী নিরাপত্তা খসড়া প্রবিধানমালা, ২০২১ দ্রুত বাস্তাবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বেঙ্গল মিডিয়াম হাই স্কুল এর প্রধান শিক্ষক বক্তব্য প্রদানকালে বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদে হেঁটে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলো স্কুলের আশেপাশে ফুটপাতগুলো ময়লা আবর্জনা এবং বিভিন্নভাবে দখল হয়ে যাওয়া। স্কুলের আশেপাশে জেব্রা ক্রসিং, স্পিড ব্রেকার না থাকায় তারা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে স্কুলে আসছে। তাছাড়া রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং করা এবং প্রাইভেট গাড়ির আধিক্যের কারনে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নিজেদের নিরাপদ মনে করে না। সড়কে পথচারীদের নিরাপদ করতে হলে অবশ্যই এ বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে আমাদেরও নিজেদের সচেতন হতে হবে।

ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ফুটপাতগুলোতে দোকনের সরঞ্জামাদি রাখার কারনে ফুটপাতদখল হয়ে যাওয়া ছাত্র-শিক্ষক-অবিভাবকরা নির্বিঘ্নে হেঁটে চলাচল করতে পারছে না। তাছাড়া ফুটপাতগুলো মেইন রাস্তা থেকে তুলনামুলক উঁচু হওয়ায় বয়স্ক, প্রতিবন্ধি এবং সাধারন মানুষের ও হেঁটে চলাচলে সমস্যা তৈরী করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ যদি স্থানীয়ভাবে তাদের সমস্যার বিষয়ে এগিয়ে আসেন তবে সমস্যা সমাধান হবে তবে এক্ষেত্রে কমিনিটির চাহিদা অনুযায়ি সমস্যার সমাধানে তারা নীতিনির্ধারকদের সাথে যোগাযোগ করলে এ সকল সমস্যা সমাধান সম্ভব। তাছাড়া ট্রাফিক সিগন্যাল ও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, নিরাপদে সড়কে হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে তারা প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সড়কে পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং, স্পিড ব্রেকার না থাকা তারা নিজেদের অনিরাপদ মনে করে। তারা আরও বলেন রাস্তায় যে ফুটপাত রয়েছে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী। অনেক ক্ষেত্রেই ফুটপাত ভাঙ্গা, ময়লা আবর্জনা এবং প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং এবং বিভিন্ন দোকান-পাটের কারনে দখল হয়ে যাওয়া তারা হাঁটতে সাচ্ছন্ন বোধ করে না। এ সমস্ত কারনে তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হয় যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক রাস্তায় ট্রাফিক থাকে না। ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তাও ময়লা আবর্জনায় নোংড়া হয়ে থাকে। নিরাপদে হেঁটে স্কুলে আসাতে তারা এ সকল বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে।

সিএলপিএ এর পলিসি এনালিস্ট আসরার হাবিব নিপু বলেন, সড়কে প্রায় ৯৫% পথচারী। সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত প্রসাশন এবং সড়ক ব্যাবহারকারী দুই পক্ষকেই দ্বায়িত্ব নিতে হবে। সড়কে চলাচলে যে আইন রয়েছে সবাইকে সে অনুযায়ি নিয়ম মেনে রাস্তা ব্যবহার করতে হবে।

সিএলপিএ এর পলিসি এনালিস্ট কামরুন্নিছা মুন্না বলেন, রাস্তায় হেঁটে চলাচলে অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো যেমন নিশ্চিত করা প্রয়োজন পাশাপাশি রাস্তায় যারা হেঁটে চলাচলে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। রাস্তায় চলাচলে আমরা অবশ্যই রাস্তার বাম পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হবে এবং জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করব।

সচেতনতা মূলক কার্যক্রমের বক্তরা প্রসাশনের কাছে রাস্তায় ফুটপাত গাড়ি পার্কিং, ময়লা আবর্জনা এবং দোকানপাট দ্বারা দখলমুক্ত রাখার, ফুটপাত উঁচু না রাখা, রাস্তায় পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং এবং স্পিড ব্রেকার এর ব্যাবস্থা করার সুপারিশ করেন। পাশাপাশি সকলকে সড়কে নিয়ম মেনে চলাচলের আহবান জানান।

এই সচেতনামূলক কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল মিডিয়াম স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব নারায়ন চন্দ্র দাস এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির। এবং সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি এয়েয়ার্স-সিএলপিএ এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম এডভাইজার আমিনুল ইসলাম বকুল, পলিসি এনালিস্ট আসরার হাবিব নিপু এবং পলিসি এনালিস্ট কামরুন্নিছা মুন্না। ফাইনান্স এন্ড এডমিন অফিসার আতিকুর রহমান। সচেতনতা উভয় স্কুলের প্রায় ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।