টাঙ্গুয়ার হাওরে যান্ত্রিক নৌযানে বিপন্ন প্রকৃতি-পরিবেশ
Online Desk | PNN
২০ মে, ২০২৩, ৩:২৩ অপরাহ্ণ
দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকো ট্যুরিজম জোন হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান বা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। হাওরে পর্যটক আসা বাড়ায় মোটরচালিত নৌযান বেশি ঢুকছে। যন্ত্রযানের তাণ্ডবে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় অভিজ্ঞজনরা।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দারা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের গাছ, মাছ ও পাখি বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাওরের নানা পথ দিয়ে শত শত ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত হাউস বোট মধ্যনগর দিয়ে ঢুকে জয়পুর পর্যন্ত আসে। আবার জয়পুরের দিকে ঢুকে মধ্যনগর পর্যন্ত যায়। ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌযানের এমন অবাধ চলাচল না ঠেকালে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হবে।
রাজধানী ঢাকার হাউস বোট চন্দ্রাবতী ও রূপকথার মালিক ইখতিয়ার হোসেন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে এখন ৭৫টি হাউস বোট এবং ২০০ ট্রাডিশনাল বোট (ইঞ্জিনচালিত) পর্যটক বহন করছে। সব মিলিয়ে যন্ত্রযান প্রায় ৪০০ হবে। এ নৌযানগুলোতে চলাচলের পথ নির্ধারণ করে দিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই।
টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন বললেন, সুনামগঞ্জ থেকে উত্তর শ্রীপুরে বা শ্রীপুর বাজারে, তাহিরপুর থেকে গোলাভারী, মধ্যনগর থেকে বংশীকুণ্ডা পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলার অনুমতি থাকতে হবে। এরপর হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতরে ঢুকতে হবে। যেখানে পর্যটকবাহী ট্রলার বা হাউস বোট থামবে। একসময় আশপাশের গ্রামে ছোট ছোট ইকো রিসোর্ট গড়ে উঠবে। ওখান থেকে হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতর পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থাও গড়ে উঠবে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরশাদুল হক বললেন, হাওরে পাখি কিংবা মাছের অভয়াশ্রম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে দিতে হবে। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়া ও চেরাদিয়ায় প্রবাল বেশি থাকায় সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ক্ষেত্রেও একইভাবে পর্যটকদের ভ্রমণক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।
গত শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাওরে যন্ত্রযানের রুট নির্ধারণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন আলোচকরা। জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়– এমন পথ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলতে পারবে না। জেলা প্রশাসন সেই নীতিমালা তৈরির কাজ করছে।