জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব আবহাওয়ায়, আসছে তীব্র গরম-তাপপ্রবাহ
| PNN
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:৫১ অপরাহ্ণ

‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’— একসময় এই প্রবাদটি বাংলাদেশের গ্রামবাংলার প্রচলিত একটি উপমা। এর দ্বারা বোঝানো হয়, মাঘ মাসের শীত এতটাই তীব্র হতে পারে যে, বাঘের মতো শক্তিশালী প্রাণীও তা সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যায়। তবে বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া সম্পূর্ণ ওলট-পালট হয়ে গেছে। এটি (জলবায়ুর পরিবর্তন) প্রাকৃতিক পরিবেশ, কৃষি, জনজীবন, অর্থনীতি সহ সামগ্রিক বিষয়গুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে, শীতকাল বা মাঘ মাস জুড়ে হাঁড়কাপানো শীতের অনুভূতি দূরে থাক, বরং মাঘ মাস শেষ হওয়ার আগেই শীত শেষ হয়ে গেছে। একইসঙ্গে গ্রীষ্মকাল শুরুর আগেই তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রচণ্ড গরম এবং তাপপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এমন অবস্থায়, গত ২ বছরের মতো এবারও দীর্ঘ সময়জুড়ে গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল চলমান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি এবং তাপপ্রবাহের কারণে মানুষজন নাকাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মের মতোই গরম শুরু হতে পারে বলেও মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
মূলত, বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, মাঘ মাস শীতকালীন ঋতুর অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত, পৌষ ও মাঘ—এই দুই মাসকে শীতকাল ধরা হয়। সবশেষ গত ৫-১০ বছর আগেও মাঘ মাসে ঘনঘন লম্বা শৈত্যপ্রবাহ, কনকনে ঠান্ডার অনুভূতি এবং কুয়াশায় চারপাশ ঢেকে যেত। আর উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৫-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমে আসত। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আগের মতো সেই কনকনে শীত গত কয়েক বছরে অনুভূত হয় না। একইসঙ্গে শীতকালের পরিব্যাপ্তি ছোট হয়ে আসায় শীতের দিনগুলোও অনেকটা কমে গেছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের খড়গে বাংলাদেশের চিরচেনা ষড়ঋতুর ভারসাম্য ভেঙে গেছে। আগে ছয়টি ঋতুর স্পষ্ট পার্থক্য ছিল। কিন্তু এখন গ্রীষ্ম ও বর্ষার দাপটে শীত যেমন ক্ষীণ হয়ে এসেছে, তেমনি শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তকালও প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বাৎসরিক প্রতিবেদনেও এমন চিত্র উঠে এসেছে।
২০২৪ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ২০২৪ সালে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ১২ মাসের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় প্রতিটি মাসেই খুব কাছাকাছি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মার্চ মাসে ৩১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এপ্রিল মাসে ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মে মাসে ৩২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুন মাসে ৩১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুলাই মাসে ৩১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আগস্ট মাসে ৩১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেপ্টেম্বর মাসে ৩১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অক্টোবর মাসে ৩১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নভেম্বর মাসে ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর মাসে ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বছরের ৪টি মাস ছাড়া বাকি সবগুলো মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর ছিল।
আবার এর বিপরীতে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বনিম্ন স্বাভাবিক তাপমাত্রা হিসেবে জানুয়ারি মাসে ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মার্চ মাসে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এপ্রিল মাসে ২৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মে মাসে ২৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুন মাসে ২৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুলাই মাসে ২৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আগস্ট মাসে ২৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেপ্টেম্বর মাসে ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অক্টোবর মাসে ২৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নভেম্বর মাসে ১৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর মাসে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এখানেও দেখা যাচ্ছে বছরের মাত্র ৩টি মাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এবং মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা বলছে, ২০২৪ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ২০২৪ সালে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা সিথ্রিএস-এর তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি, যা বন্যা, খরা এবং তীব্র দাবদাহের মতো চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, ২০২৪ সালের ১০ জুলাই বিশ্বব্যাপী ৪৪ শতাংশ অঞ্চল চরম তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং ২২ জুলাই ছিল রেকর্ড করা ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ দিন। বাংলাদেশে গত বছরের এপ্রিল মাসে ২৬ দিনের তাপপ্রবাহের রেকর্ড ছিল। ওই সময় গরমে হিটস্ট্রোক করে প্রায় ১৫ জন মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সে অনুযায়ী এবছরও অত্যধিক তাপমাত্রা এবং তাপপ্রবাহ থাকার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, বছরের শুরুতেই যার কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়েছে (সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দুটোই বেশি ছিল)। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের বেলায় বেশ গরমের অনুভূতি হয়েছে।
এমন অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান অবস্থা এবং বৈশ্বিক পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৫ সালে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম পড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই বছরের জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, গতবারের মতো এবছরও তাপমাত্রা খানিকটা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাপমাত্রা ঠিক কোন সময় বেড়ে যাবে, এটি সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা যাচ্ছে, এই বছরের গ্রীষ্মকাল বেশ পাকাপোক্তই হবে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশের উষ্ণতা সারা বিশ্বজুড়েই বাড়ছে। সেজন্য গত বছরের মতোই এবার অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকাটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে তাপপ্রবাহের ধরনও বদলেছে। সাধারণত আগে তাপপ্রবাহ মার্চ মাসে শুরু হতো, কিন্তু গত বছর এপ্রিল মাসে শুরু হয়েছে। যেমন দেরিতে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তেমন দীর্ঘ সময় এটি অবস্থান করেছে। আর এই মাসে (ফেব্রুয়ারি) প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই ভোর-সকালবেলা কিছুটা শীতের অনুভূতি থাকলেও ৯টার পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। তখন আবার দিন বড় হয়ে যাবে। ফলে গরমের অনুভূতিও বেশি থাকবে বলে মন্তব্য করেন এই আবহাওয়াবিদ।
জলবায়ুর পরিবর্তন কৃষি উৎপাদন, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা—সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একসময় যে ছয়টি ঋতু একে অপরের পরিপূরক ছিল, সেটি এখন ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। এর প্রভাবে কখনো বেশি বৃষ্টি, কখনো অতিরিক্ত গরম, আবার কখনো দীর্ঘ খরার প্রকোপ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় এবছরও বেশি তাপমাত্রা ভোগান্তির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
তিনি বলেন, ২০২২ সাল থেকে ২০২৭ পর্যন্ত বছরগুলো উষ্ণতম বছর হিসেবে ধরা হয়েছে। বৈশ্বিক আবহাওয়া অফিসগুলো এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে। এর কিছু বাস্তবিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। যেমন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির নিচে রাখার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেটি গত বছরই ভঙ্গ হয়েছে। কারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নিঃসৃত গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে জমা হচ্ছে। দিন দিন এটি পৃথিবীকে আরও উষ্ণ করছে। এছাড়া আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। গ্রামে এখন আর আগের মতো জলাশয়ও নেই। খাল-বিল সমানতালে ভরাট করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা কমানোর উপাদানগুলো কমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বন উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং কার্বন নিঃসরণ সামগ্রিকভাবে একটি বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে যদি আমরা এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রকৃতির স্বাভাবিক কার্যক্রমে অনেকটাই অগোছালো অবস্থা দেখা গেছে। এর মধ্যে, প্রচণ্ড গরমের সময়সীমা বেড়েছে, হঠাৎ করেই কালবৈশাখীর তাণ্ডব দেখা দিচ্ছে, অনিয়মিত বর্ষায় বন্যা-খরার দোলাচল তৈরি হচ্ছে, শীতকাল ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং হেমন্ত ও বসন্তের মৃদু আমেজও এখন আর তেমন টের পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও আশঙ্কার কথা হচ্ছে— গত ৭ বছর ধরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে, যার গড় পরিমাণ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত বছর (২০২৪ সালে) এসে দাঁড়ায় ৩৬.৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৭ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়ায় ৩৭.৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) করা ২০১৭ সাল ও ২০২৪ সালের ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রার তারতম্যের মূল্যায়ন সম্পর্কিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্যাপসের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সময়ে ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতিঝিল এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ২০২৪ সালে এসে দেখা গেছে মতিঝিল এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে ৩৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছে। অর্থাৎ গত ৭ বছরের ব্যবধানে এই এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩.৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে রাজধানীর অন্যতম জনবহুল এলাকা গুলিস্তানের ২০১৭ সালের তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২৪ সালে এসে দেখা গেছে গুলিস্তানের বর্তমান তাপমাত্রা ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে গত ৭ বছরের ব্যবধানে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে। এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে মহাখালী এলাকায়। এই এলাকায় ২০১৭ সালে তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত ৭ বছরের ব্যবধানে মহাখালীতে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ ডিগ্রি, অন্যদিকে তেজগাঁও, মিরপুর ১০, ফার্মগেট এলাকায় গত ৭ বছরের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৩ ডিগ্রির বেশি।
তাই এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে জলবায়ু-বান্ধব নীতি গ্রহণ করা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, এ বছর শীত তুলনামূলকভাবে উষ্ণ হচ্ছে। অনেক জায়গায় শীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঠান্ডা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনো আবহাওয়া প্রভাবের কারণে ২০২৪-২৫ সালের শীত বিশ্বজুড়ে কিছুটা উষ্ণ হয়েছে। এটি বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরূপ একটি প্রভাব। তাছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি, গত কয়েক বছর ধরে শুধু ৩টি ঋতু দৃশ্যমান হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ থেকে শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত পর্যায়ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছর তীব্র তাপপ্রবাহের সময় পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন সরকারও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।