২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ওমরাহ হজ্বে মানুষ যাচ্ছে বেশি, বড় হজ্বে বেড়েছে খরচ


Online Desk | PNN

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

চতুর্থ দফায় হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আরও ৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর আগে, তিন দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হলেও প্রাক-নিবন্ধনকারীর অর্ধেক যাত্রীও চূড়ান্ত নিবন্ধন করেননি। ফলে হজযাত্রী শূন্যতায় ধুঁকছে এজেন্সিগুলো। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনকারী হজযাত্রীর সংখ্যা ৭৯ হাজার ৮৬২ জন। এর মধ্যে সরকারি ৪ হাজার ১৬৫ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৫ হাজার ৬৯৭ জন। নিবন্ধন বাকি আছে হজে গমনেচ্ছুক প্রাক-নিবন্ধনকারী ৮৪ হাজার ৮৬৪ জন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা রয়েছে।

 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, হজযাত্রীদের সেবার জন্য এজেন্সি রয়েছে ৯৪০টি। চূড়ান্ত নিবন্ধনের পরিসংখ্যানের হিসাবে, গড়ে ৮০ জন করে হজযাত্রী পড়ে প্রতি এজেন্সিতে। তবে এটি প্রকৃত চিত্র নয়। কোনো কোনো এজেন্সিতে আছেন দুই-তিনশো বা আরও বেশি যাত্রী। আবার কয়েকটি এজেন্সি পেয়েছে ২০ জনের মতো। হজযাত্রী শূন্যতায় সরাসরি হজে পাঠানোর ক্ষেত্রে একাধিকবার সৌদি আরবে হজ এজেন্সির কোটা

কমানোর দাবি জানাতে হয়েছে বাংলাদেশের।

 

২৫০ জনের কম যাত্রী হলে লিড এজেন্সি : সৌদি সরকার গত ২৬ জানুয়ারি জানিয়েছে, সরাসরি হজে পাঠানোর ক্ষেত্রে হজ এজেন্সির জন্য সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা কমিয়েছে সৌদি সরকার। ফলে এখন যেসব এজেন্সির হজযাত্রী ২৫০ জন হবে তারা সরাসরি হজে লোক পাঠাতে পারবে। যেসব এজেন্সির হজযাত্রীর সংখ্যা ২৫০-এর কম সেসব এজেন্সিকে অন্য এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করে লিড এজেন্সি নির্ধারণ করে হজযাত্রী পাঠাতে হবে। সৌদি সরকার ২০২৪ সালের হজের জন্য বাংলাদেশসহ সব দেশের হজ এজেন্সির সর্বনিম্ন কোটা প্রথমে দুই হাজার জন এবং পরবর্তী সময়ে ৫০০ জন নির্ধারণ করে পত্র দেয়। তৃতীয় দফায় ওই কোটা ২৫০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

 

সাড়া নেই ভিআইপি প্যাকেজে : চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার দুটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি সাধারণ প্যাকেজ, অন্যটি বিশেষ। সাধারণ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা, আর বিশেষ (ভিআইপি) প্যাকেজের মূল্য রাখা হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এই প্যাকেজে কতজন যাত্রী নিবন্ধন করেছেন, তা জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বছরই প্রথমবারের মতো বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এটি অনেকে জানেনও না।

 

কম ব্যয়ে ওমরাহে আগ্রহ মানুষের : পবিত্র কাবা শরিফে প্রতি বছর ওমরাহ করতে যান বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম। তবে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে গত বছর ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ বিদেশি ওমরাহ পালন করেছেন বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। সৌদির বাইরে থেকে মক্কায় এসে ওমরাহ করেছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ। ২০২২ সালের তুলনায় এটি ৫৮ শতাংশ বেশি। এ হারে বাংলাদেশ থেকেও ওমরাহ হজে বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি মুসল্লি যাচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ হিসেবে এজেন্সিগুলো মনে করে- এতে ব্যয় কম। তবে এক বছরে কত সংখ্যক মুসল্লি উমরাহ হজে গেছেন এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই এজেন্সিগুলোর কাছে।

হজের নিবন্ধনের সময় শেষ হলেও কোটা পূরণ হয়নি কেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল রাতে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এখন অনেকে ওমরাহ করছেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল; হজ প্যাকেজ ব্যয় বেশি ছিল- এসব বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, বেসরকারি প্যাকেজে গত বছর থেকে এবার ৯০ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোনো সার্ভিসের দিন দিন মূল্য বাড়ে, আমরা সেটা কমিয়েছি।

 

চার দফা নিবন্ধনের সময় : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক গতকাল শুক্রবার জানান, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বিশেষ বিবেচনায় শেষবারের মতো আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন অথবা নির্ধারিত প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা যাবে। প্রাথমিক নিবন্ধন করা হলে প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একই ব্যাংকে জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় এ বছর হজে যাওয়া যাবে না এবং প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।

 

এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বাড়ল হজ নিবন্ধনের সময়। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয়। প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি, তৃতীয় দফায় ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপরও হজ এজেন্সিগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে আবার বাড়ল হজ নিবন্ধনের সময়।

 

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন : এ বছর পূরণ না হলে আগামী বছর বাংলাদেশের কোটা কমে যেতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, এমনটা হওয়ার কথা না। এরপরও আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করব। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এক সময় অনেক হজযাত্রী পাওয়া যেত, সে সময় কাকে রেখে কাকে সুযোগ দেওয়া হবে, এমন বিষয়ও ছিল। যে কারণে প্রাক-নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আমার মনে হয় আগামী বছর থেকে প্রাক-নিবন্ধন প্রথা বাতিল করে হজে গমনেচ্ছুদের সরাসরি পূর্ণ নিবন্ধনই করে নেব। এমনকি একসঙ্গে হজের ব্যয়ও নিয়ে নেওয়া হবে। যাতে করে আর নিবন্ধন নিয়ে পরবর্তীতে কোনো সময়ক্ষেপণ না করতে হয়। বিশে^র বিভিন্ন দেশ কিন্তু একবারই হজের নিবন্ধন করে ফি নিয়ে নেয়।

 

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যয় : সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার খরচ কমেছে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছর বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। হাব জানিয়েছে, হজযাত্রীকে কোরবানি বাবদ আনুমানিক ৮০০ সৌদি রিয়াল নিতে হবে এবং কোরবানি নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হবে।